ফরিদপুরে বাস-সিএনজি শ্রমিক দ্বন্দ্বে বন্ধ বাস চলাচল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ফরিদপুরে বাস-সিএনজি শ্রমিক দ্বন্দ্বে বন্ধ বাস চলাচল, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
ডেস্ক রিপোর্ট
ফরিদপুরে বাস শ্রমিক ও এলপিজি গ্যাস চালিত গাড়ির চালকদের মধ্যকার দ্বন্দ্বে বন্ধ রয়েছে সকল রুটের বাস চলাচল। পাশাপাশি ত্রি-হুইলার বিশিষ্ট মাহিন্দ্র ও এলপিজি চালিত গাড়ি চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছেন বাস শ্রমিকরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আঞ্চলিক রুট সহ দূরপাল্লার যাত্রীরা।
১ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুরে শহরের পৌর বাস টার্মিনাল, পুরাতন বাস টার্মিনাল ও রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকল ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা লাঠি হাতে সড়কে অবস্থান করছেন। মাহিন্দ্র ও এলপিজি চালিত গাড়ি শহরে প্রবেশ করায় বাঁধা দিচ্ছেন। এতে যাত্রীদের হয়রানিসহ ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে।
জানা যায়, সোমবার বিকালে শহরে নাজমুল হোসেন (২৫) নামে এক এলপিজি চালককে মারধর করেন বাস শ্রমিকরা। সে নগরকান্দা উপজেলা এলপিজি গ্যাস চালিত থ্রি-হুইলার চালক সমিতির সদস্য। এ ঘটনার পর নগরকান্দায় এলপিজি গ্যাস চালিত থ্রি-হুইলার চালক সমিতির সদস্যরা ন্যায় বিচার সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে বিক্ষোভ করেন এবং সদরপুর, নগরকান্দা ও ভাঙ্গা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এর প্রতিবাদে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আঞ্চলিক সকল রুটের বাস চলাচল ও আজ সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করেন বাস শ্রমিক ও মালিকপক্ষ।
নগরকান্দা এলপিজি গ্যাস চালিত থ্রি-হুইলার চালক সমিতির সদস্য মতিউর, শেখ জসিম ও বিল্লাল মুন্সি বলেন, ‘ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির অত্যাচারে জিম্মি দশায় এলপিজি গ্যাস চালিত থ্রি-হুইলার চালকরা। ফরিদপুর গেলে তারা আমাদের চালকদের মারপিট করে। এছাড়া বাস মালিক সমিতির কারনে আমাদের এলপিজি -মাহিন্দ্র সহ ছোট গাড়ী গুলোর রুট পারমিট পাচ্ছিনা।
’তাঁরা রুট পারমিটসহ বাস মালিক সমিতির জিম্মি দশা ও অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। আন্দলোনকারীরা বিচার না পাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন। অপরদিকে বাস শ্রমিক ও নেতারা বলছেন, মহাসড়কে ত্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচি চলবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুর মটর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক নাজমুল হক তারা বলেন, মহাসড়কে তিন চাকা বিশিষ্ট গাড়ি চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু তাঁরা তা তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন স্থান থেকে মহাসড়ক হয়ে যাত্রী নিয়ে শহরে প্রবেশ করছে। এর জেরে আমাদের শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে এলপিজি চালকরা মারধর করেন। আজ সকালে তাঁরা সদরের মুন্সিবাজার এলাকায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসও ভাংচুর করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমাদের শ্রমিকদের ওপর হামলাকারীদের ও বাস ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার না করা হবে এবং আমাদের দাবি না মেনে নিবে ততক্ষণ সকল ধরনের বাস ও এলপিজি -মাহিন্দ্র গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হবে না।
বিষয়টি নিয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, ‘এলপিজি ও মাহিন্দ্র গাড়ি গুলো অবৈধ, সেগুলো রাস্তায় চলবেনা, আমরা চলতে দিবনা। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। ’https://www.cpmrevenuegate.com/pdi063hwz?key=0299aef94c4809d41c7b37ad6a5dbe45
তবে, বাস ভাংচুর ও শ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি বলে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন।
এদিকে বাস শ্রমিক ও এলপিজি চালকদের দ্বন্দ্বে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারন মানুষ। বাস টার্মিনালে এসে গন্তব্যে পৌছাতে না পেরে কেউ কেউ বিকল্প ব্যবস্থায় ঢাকায় যাচ্ছেন। আবার অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। পৌর বাস টার্মিনালে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছেন দেলোয়ার হোসেন নামে এক বেসরকারি কোম্পানীর চাকরীজীবী। তিনি বলেন, ‘ভোগান্তির শেষ নেই। অফিসের একটি কাজে ফরিদপুরে এসেছিলাম, এখন জরুরীভাবে ঢাকায় যেতে হবে। এখন দেখি বাস নেই, এটা খুবই কষ্টের। সঠিক সময়ে অফিসে পৌছাতে না পারলে বসের রাগারাগিও শুনতে হবে।’ তাঁর মতো এমন অনেক যাত্রীই ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছেন। কিন্তু মিলছে না কোনো বাস, বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
এসব বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্যার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত নই’।
Tag:
No comments: