কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। আর কৃষির উন্নয়ন হলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে

কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। আর কৃষির উন্নয়ন হলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে--কৃষিমন্ত্রী

জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর

কৃষিমন্ত্রী ও  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। আর কৃষির উন্নয়ন হলেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে। দেশে ক্রমশ কৃষি জমি কমছে, আর মানুষ বাড়ছে। ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিতে আমরা কম সময়ে অধিক ফলন ও একই জমি থেকে বার বার ফসল ফলানোর উপর গুরুত্বারোপ করছি। আমাদের বিজ্ঞানীরা স্বল্পজীবনকালীন উন্নত জাতের ধানের ও অন্যান্য অনেক ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে, যা চাষের মাধ্যমে বছরে ১ টি অতিরিক্ত ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। একইসঙ্গে,  ফলনও অনেক বেশি। এই জাতগুলোকে কৃষকের নিকট দ্রুত জনপ্রিয় করতে হবে।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজনে ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মার্ল্টিপারপাস হলরুমে বৃহত্তর ফরিদপুর ও যশোর অঞ্চলে তেল ফসল ও ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। পরিকল্পনার প্রথম বছরেই আমরা ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত সরিষা উৎপাদন করতে পেরেছি। আশা করছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী, ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের মাধ্যমে তেল আমদানি অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। এতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর পরীক্ষামূলক কিছু দেশীয় মডেল ঘর নির্মাণ করেছি, যেখানে ৪-৫ মাস ধরে পেঁয়াজ ভালো অবস্থায় আছে। এটি একটি কার্যকর সংরক্ষণ পদ্ধতি হবে। এবছর সারা দেশে এই সংরক্ষণ মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে মাঠে পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল জাত দেয়া হয়েছে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, আর মডেল ঘরে সংরক্ষণ করতে পারলে পেঁয়াজের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে না, বরং আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারব।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ক্রমাগতভাবে কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সার, সেচ, বীজসহ কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করে কৃষকের দোরগোড়ায় অব্যাহতভাবে পৌঁছে দিচ্ছে। আর এসব কারণেই বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে।

উল্লেখ্য, নতুন শস্যবিন্যাস কৃষকের নিকট জনপ্রিয় করতে দেশের বিভিন্ন কৃষি অঞ্চলে কর্মশালা পরিচালনা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যেখানে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, কৃষক, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ অনেকে উপস্থিত থাকেন। এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী, দুই ফসলী জমিকে তিন/ চার ফসলী জমিতে রূপান্তর করে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই এ কর্মশালা।

কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোঃ শাহজাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, পৌর মেয়র অমিতাভ বোস এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা।

অনুষ্ঠানে কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) ফরিদপুর অঞ্চল প্রধান ড. সেলিম আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ হারুন-অর রশিদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলভি রহমান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজাদ হুমায়ুন কবির, ডলি রানী বিশ্বাস প্রমুখ।

কৃষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী চাষি শাহিদা বেগম, জৈব সার উৎপাদনকারী চাষি তানিয়া পারভীন, মাগুরা জেলার ধান চাষী আক্কাস হোসেন।

এসময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মোঃ ইশতিয়াক আরিফ, সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার ব্যানার্জী, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটন ঢালী, সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন, কোতয়ালী থানার ওসি (অপারেশন) মোঃ আব্দুল গাফফারসহ ফরিদপুর এবং যশোর জেলার উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ, কৃষক এবং কৃষক উদ্যোক্তা ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে ফরিদপুর সার্কিট হাউজে জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমেরিকা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল, আমরা তখনো কোন ভয় পাই নি। কাজেই, সকল ষড়যন্ত্র,  নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সমর্থনে আবার প্রধানমন্ত্রী হবেন।