ফরিদপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সফল কৃষকরা
ফরিদপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে সফল কৃষকরা
ডেস্ক রিপোর্ট
পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের ২য় বৃহত্তম জেলা ফরিদপুর। ফরিদপুরে প্রায় ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। এ বছর জেলায় প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। সাধারণত বছরের শেষের দিকে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে পেঁয়াজের ব্যপক ঘাটতি পরে। এ সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করে । ফলে বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করলেও দাম বেশী থাকে। নাবীতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ যদি বাজারে সরবরাহকরা যায় তাহলে পেঁয়াজের বাজারের অস্থিতিশীলতা দুর করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এক বিঘা মুড়িকাটা পেঁয়াজ উৎপাদন করতে যেখানে কৃষকের ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে এই পেঁয়াজ উৎপাদনে এক বিঘা জমিতে কৃষকের মাত্র ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়াও পেঁয়াজের এই জাতটি পানি সহনীয় হওয়ায় বৃষ্টিতেও কোন ক্ষতি হয় না।
নতুন প্রযুক্তিতে আবাদ করা এ পেঁয়াজ বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ১০০-১২০ মণ। এতে বিঘা প্রতি লাখ টাকার ওপরে লাভ হবে কৃষকদের। পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পাশে রয়েছে। ফরিদপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার পাশাপাশি আধুনিক চাষের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছে। ভালো ফলন এবং দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে।
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পরীক্ষামূলক নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে ৩ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে। এতে ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমিতে ১০০ মণের উপরে পেঁয়াজ হয়েছে। কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি চাষ করেছেন বিপ্লব জাতের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ। আগামী বছর ১০০০ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষী সালাম ব্যাপারী বলেন, আমি গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। আমাকে বিনামূল্যে সার, বীজ, চারা তৈরির জন্য ছাউনি, পরিচর্যা বাবদ টাকা দিয়েছিল। এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা মণ বিক্রি করতে পারব আশা করছি। এক বিঘা জমি থেকে ২ থেকে ২.৫ লাখ লাখ টাকার মতো পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারবো। আমিই প্রথম এ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করছি। আমি যখন এই পেঁয়াজের চাষ শুরু করি তখন অন্য কৃষকরা আমাকে পাগল কইছে। কিন্তু এখন তারাই আমার ক্ষেত দেখতে আসতেছে।
একই এলাকার কৃষক নুর ইসলাম খাঁন জানান, আগে এ এলাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হইত না। কিন্তু এইবার হইতেছে। এ পেঁয়াজ খুবই ভালো হইছে। সালাম ব্যাপারী যখন এই পেঁয়াজ চাষ শুরু করে আমি তখন তারে পাগল কইছিলাম। এখন ফলন দেইখা মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আগামীতে আমিও এই পেঁয়াজ চাষ করব। এর ফলন অনেক বেশি। বিঘা প্রতি ১০০-১২০ মণ হিসাবে ফলন হইছে। দাম কম হলেও ফলনের জন্য আগামীতে বেশি চাষ করব।
গ্রামের গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, এ বছরই প্রথম আমি কৃষি অফিসের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করেছি। যে ফলন দেখছি, আগামীতে পাঁচ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করব। শীতকালীন পেঁয়াজের তুলনায় দ্বিগুণ ফলন। আমার পাশের জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাইছে, তারা ৫০ মণও তুলতে পারতেছে না, আবার খরচও বেশী। আর গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদে চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয়। আগামীতে আমাদের এলাকায় ১০০০ বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজের আবাদ করবো। সরকার যদি আমাদের সহযোগীতা করে তাহলে তাহলে আমরা দ্বিগুণ উৎসাহের সাথে কাজ করতে পারবো।https://www.profitablecpmrate.com/pdi063hwz?key=0299aef94c4809d41c7b37ad6a5dbe45
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে শুধু কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, তা নয়, চাষিদের পাশাপাশি পেঁয়াজ পরিষ্কার করে অনেক নারীও লাভবান হচ্ছেন। মাঠ থেকে তোলা পেঁয়াজ পরিষ্কার করে তারা মণ প্রতি ৩০ টাকা করে পাচ্ছে। প্রতিদিন তারা পেঁয়াজ পরিষ্কার করে ৫০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ খুবই লাভজনক। আমরা কৃষকদের প্রণোদনা ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে কৃষকদের এ পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজে কৃষকরা জাত ভেদে বিঘা প্রতি ১০০-১২০ মণ ফলন পাবে। সেই সঙ্গে তারা ভালো দামও পাবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এই জাতটি পানি সহনীয় হওয়ায় পঁচন ধরে না, ফলে সার, কীটনাশকও কম ব্যবহার করতে হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ফরিদপুর অঞ্চল) মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, বাজারে যাতে এ সময় পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকে, সেজন্য বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের মাধ্যমে আগামীতে পেঁয়াজের ঘাটতি অনেকটাই পূরণ হবে। এছাড়া এটি কম সময়ের ফসল, সেই সঙ্গে বেশি লাভজনক, তাই কৃষকরাও বেশ আগ্রহী হচ্ছেন।
Tag:
No comments: