ফরিদপুরে কলেজ ছাত্র প্রান্ত হত্যায় হোতাসহ গ্রেফতার ৪
ফরিদপুরে কলেজ ছাত্র প্রান্ত হত্যায় হোতাসহ গ্রেফতার ৪
জিল্লুর রহমান রাসেল, ফরিদপুর
ফরিদপুরে
রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত মিত্র হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের
কাছে থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।
০২
আগষ্ট বুধবার দুপুর ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে
এসব তথ্য জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান।
গ্রেফতারকৃতরা
হলেন- শহরের গুহলক্ষীপুর এলাকার শাহীন শেখের ছেলে সজীব শেখ (২৩), একই এলাকার সামাদ শেখের ছেলে মাসুম শেখ (৩৪), চরমাধদিয়া ইউনিয়নের আবু তালেব মল্লিকের ছেলে ইসরাফিল মল্লিক (৩৪) ও টেপাখোলা এলাকার
লিটন ব্যাপারীর ছেলে সিফাতুল্লাহ ব্যাপারী (১৯)।
পুলিশ
সুপার বলেন, প্রান্ত মিত্র হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, চাপাতি, সেভেন গিয়ার চাকু ও রেঞ্জসহ হত্যার
সময় হত্যাকারীর গায়ে থাকা রক্তমাখা জামা-কাপড়, জুতা ও বেল্ট উদ্ধার
করেছে পুলিশ। একই রাতে তারা শহরের আরও তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। বুধবার আসামিদের আদালতে সোপর্দ করে অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
তিনি
বলেন, আসামিদের মধ্যে ইসরাফিল ও সজিবের ছিনতাইয়ের
আলাদা আলাদা বাহিনী রয়েছে। সজিব ও ইসরাফিল আলাদাভাবেও
ছিনতাই করতে বের হয়। কারাগারে ইসরাফিল, সজিব ও সিফাতুল্লাদের মধ্যে
বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে। সজিবের বিরুদ্ধে ছয়টি ও ইসরাফিলের বিরুদ্ধে
নয়টি ডাকাতি প্রস্তুতি, ছিনতাই ও মাদক মামলা
রয়েছে। তারা মূলত মাদকসেবন ও যৌনপল্লিতে ফুর্তি
করার জন্য ছিনতাই করতো।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সজিব, ইসরাফিল ও সিফাতুল্লাহ প্রান্তর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা মাসুম শেখের মোটরসাইকেল নিয়ে ছিনতাই করতে বের হয়। ওই রাতে তাদের প্রথম টার্গেট হন প্রান্ত। তারা আলীপুর ব্রিজের পূর্বপাশের সড়কে প্রান্ত’র রিকশার গতি রোধ করে। ওই সময় প্রান্ত রিকশা থেকে নামতে গেলে তাকে ঝাপটে ধরে তারা। প্রান্ত মোবাইলফোন ও মানিব্যাগ দিতে অস্বীকার করলে সজিব তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে আঘাত করে। এতে প্রান্ত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে আসামিরা পালিয়ে যায়।
এ
ঘটনায় আমরা প্রান্তকে বহনকারী রিকশাচালককে শনাক্ত করি। ওই চালকের কাছে
ওই রাতের বর্ণনা শুনে নিশ্চিত হই এটা ছিনতাই
করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড। চালক জালাল মিয়া আসামিদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।’
পুলিশ
সুপার বলেন, প্রান্তকে হত্যার আধা ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে
লাশের সুরতহাল তৈরিতে ব্যস্ত থাকার সুযোগে গ্রেফতারকৃতরা রাত পৌনে ৪টার দিকে শহরের বাদামতলী সড়কে এক সবজি বিক্রেতার
কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা
ছিনতাই করে। এরপর তারা সোয়া ৪টার দিকে শহরের ঝিলটুলি পুরাতন পাসপোর্ট অফিসের মোড়ে এক ইমামের কাছ
থেকে মোবাইলফোন ও নগদ ৭০০
টাকা ছিনতাই করে। তারপর ভোর পৌনে ৫টার দিকে তারা শহরের তেতুলতলা মান্নান হেরিটেজের সামনে জেলা জাকের পার্টির সভাপতি জাদু মিয়াকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার মোবাইলফোন ও টাকা ছিনিয়ে
নেয়।
প্রেস
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এসব গণছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতা, থানা পুলিশ ও ডিবির সমন্বয়ে
পুলিশের একটি চৌকস টিম গঠন করে মামলার তদন্ত পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন সিসি টিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্য প্রযুক্তির
সহায়তায় মঙ্গলবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায়
ঢাকার শ্যামপুর হতে তানভীর আহম্মদ সজিব শেখকে গ্রেফতার করা হলে তার কাছ থেকে নিহত প্রান্ত মিত্রের ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। এরপর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মধুখালী হতে আরেক আসামি ইসরাফিল মোল্লাকে গ্রেফতার করার পর তার কাছ
থেকে যাদু মিয়ার ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পরে অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়।
সাংবাদিকদের
প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কুপিয়ে আহত হওয়ার পর প্রান্তের শরীর
রোড ডিভাইডারের উপর হাঁটু ভাঙ্গা অবস্থায় চিৎ হয়ে পড়েছিল। এজন্য তার শরীরে রক্তক্ষরণ হলেও তার বেশিরভাগই পেটের খালি স্থানে জমে ছিল বলে পোস্টমর্টেমে দেখা যায়। পোস্টমর্টেমকারী চিকিৎসক জানান, আড়াই থেকে তিন লিটার রক্ত তার শরীরের মধ্যে জমা ছিল। অল্পকিছু রক্ত বাইরে বের হয় যা মাটিতে
লেগে ছিল।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলন শেষে নিহত প্রান্তের মা পুতুল মিত্র সাংবাদিকদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে বলেন, 'আমি তো টিকতে পারতেছি না। আমার বাবা সারাজীবন পরের উপকার করতে করতে নিজের জীবন দিয়ে গেল। এমনভাবে আর কারো জীবন যেন না যায়।'
সংবাদ
সম্মেলনে পুলিশের অন্যান্য কর্মকতা ছাড়াও প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার
সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত,
গত ২৫ জুলাই দিবাগত
রাত আড়াইটার দিকে হৃদয় নামে এক বন্ধুর ফোন
পেয়ে শহরের ওয়ারলেসপাড়ার বাসা থেকে রিকশায় করে শিশু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ছুরিকাঘাতে নিহত হন প্রান্ত। এর
দুদিন পর ২৭ জুলাই
দিবাগত রাতে প্রান্তের বাবা বিকাশ মিত্র অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় মামলা করেন।
Tag:
No comments: