পৈত্রিক জমি দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের দ্বারে মোশাররফ
চরমাধবদিয়ায় ভূমিদস্যু মিন্টু পালের অত্যাচার (পর্ব-২)
পৈত্রিক জমি দখল
মুক্ত করতে প্রশাসনের দ্বারে মোশাররফ
ফরিদপুর
জেলা সদরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের হাফেজডাঙ্গী গ্রামে এক আতঙ্কের নাম
শহিদুজ্জামান মিন্টু পাল। একের পর এক নামে-বেনামে, কলা-কৌশলে চাপে ফেলে জমি ক্রয় করা তার পেশা হয়ে উঠেছে। তিনি এলাকার শাহজাহান পালের পুত্র। এবার তার ভয়ে এবং পৈত্রিক জমি হারানোর শঙ্কা জানিয়েছেন ঐ গ্রামের মৃত
গেন্দু শেখের পুত্র মোশাররফ শেখ। বাড়ির পাশে নিজের চাষাবাদের ৮ শতাংশ জমি
দখল রোধে ঘুরছেন ঘুরছেন থানা পুলিশ, চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মাতুব্বরদের
কাছে।
ভুক্তভোগী
মোশাররফ এ প্রতিবেদককে বলেন-
১৪২ নং দক্ষিণ চরমাধবদিয়া
মৌজার ৩৮৫৫ নং দাগের ১.৯৫ একর জমির
মধ্যে ৭২.৯১ শতাংশ
জমি রেখে আমার বাবা মারা যান। পরবর্তীতে এই জমির ওয়ারিশভুক্ত
হই ৪ ভাই ও
৭ বোন। এরপর গত ৩/৪
বছর আগে আমার অন্যান্য ভাই-বোন মিন্টু পালের কাছে তাদের অংশ বিক্রি করে দেয় বলে জানতে পারি। কিন্তু এরপর থেকে আমার অংশটুকুও দখল করে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐ জমিতে আমাকে
যেতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। এমনকি কোনো শালিস-মিমাংসাও মানতেছে না।
পৈত্রিক সম্পত্তির উপর দাড়িয়ে তিনি বলেন, এই জমি আমরা ভাইরা মিলে আউড়্যা করে (দৈর্ঘাভাবে) চাষাবাদ করতাম। আমার ভাইরা তাদের অংশটুকু বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু এরপর থেকেই মিন্টু জোর করে আমাকে লম্বা করে চাষ করতে বলে। সাবেক চেয়ারম্যান আড় দিকে চাষ করার সিদ্ধান্ত দিয়ে গেছিলো, সেই সিদ্ধান্তও মানতেছে না। আবার এই জমিতে আড় দিকে মাইটাল (পুকুর) কেটে নিছে মিন্টু। তারপর চেয়ারম্যানকে বলার পর, চেয়ারম্যান মিন্টুকে বলেছে, লম্বাভাবে জমি দিতেছিস তাহলে আউড়া (দৈর্ঘ্য) দিকে পুকুর কাটছিস কেন। পরে চেয়ারম্যান জানায়- আমার আর কিছু করার কায়দা নাই, তোর যা ভালো মনে হয় কর। এই চেয়ারম্যান চলে গেছে। আমি এহেন্নে (এখন) কি করমু? আমার জমিই এইটুক। চাষবাদ করে ক্যামনে খাবো। আমি গ্রামবাসীর কাছে কই (বলি), তারা কয়- আমরা কি করমু। এহন এই জমি চাষবাদ করে খাবার না পারলে বাধ্য হয়ে ওর কাছে (মিন্টু) বিক্রি করে দিতে হবে। আমার ভাইরা যেমন বিক্রি করে দিছে।
তিনি
আরো বলেন- এই জমি রক্ষা
করার জন্য আমি বিভিন্ন জায়গা দরখাস্ত দিছি কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। আমি ফরিদপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কাছে সুষ্ঠু বিচারের জন্য সহায়তা চাচ্ছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুদিন আগেও এই মিন্টু পালের কোনো কিছু ছিলো না। হঠাৎ সে টাকা-পয়সায় ফুলে-ফেপে উঠেছে। টাকা-পয়সার প্রভাবে সে আশেপাশের জমিজমা কিনতেছে। সে আমাদের শেখ পরিবারের উপর জুলুম করতেছে। সে কোথা থেকে জমি কেনে, কিভাবে কিনে, তার পরিপূর্ণ কাগজপত্র কিছুই দেখাতে পারে না। এরপর আমরা কোনো কাজ করতে গেলে নিজের জমি দাবি করে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
এ
সময় মোকছেদ শেখ (৬০) বলেন- মিন্টু পালের ফার্মের জন্য আমরা গন্ধে থাকতে পারি না। আর আমার জমি
নিয়ে সব দখল করে
খাইতেছে। আমার ছোটভাই মোতালেব গন্ধে টিকতে না পেরে তার
মিন্টুর কাছে জমি দিয়ে চলে গেছে।
মোশাররফের
স্ত্রী আহ্লাদী বেগম বলেন- আমার স্বামীকে ক্ষেতে যাইতেই দেয়না মিন্টু। গেলেই মিন্টু ও তার লোকজন
লাঠি-শোঠা নিয়ে দৌড়ে যায়। ক্ষেতে ফসল লাগাইলিই রাতের বেলা তুলে নিয়ে যায়। আমার স্বামীর পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। আমার স্বামীর আমি ছাড়া কেউই নেই। অনেক সময় আমাকেও মারতে আসে মিন্টু।
এ
বিষয়ে মিন্টু পালের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘মোশাররফের সাথে আমার জমি-জমা নিয়ে কোনো ঝামেলা নাই। ওর বড় ভাই
মতিন (মোশাররফের সৎ ভাই) সব
বলতে পারবে। কিন্তু
সরেজমিনে গিয়ে মতিন শেখকে বাড়িতে না পাওয়ায় তার
বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Tag:
No comments: