প্রতিদিনের জীবন

প্রতিদিনের জীবন
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে করণীয়

ইসলামী জীবন

» »Unlabelled » সৎ পুত্রকে হত্যার বর্ণনা দিলো ঘাতক বাবা মিজান

সৎ পুত্রকে হত্যার বর্ণনা দিলো ঘাতক বাবা মিজান

বিশেষ প্রতিনিধি

হত্যার পর শিশু মুরসালিনের মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে পুঁতে রাখা হয়েছিল নদীর পাড়ে। ঠিক একবছর পরে শিশুরা খেলাধুলা করার সময় ফুটবল মনে করে একটি গোলাকার মাটির কুন্ডুলি লাথি দিতেই বেরিয়ে আসে মানবমাথার খুলি। খবর পেয়ে পুলিশ ওই মৃতেদেহর প্রায় ৭০টি হাড়-গোড় উদ্ধার করে। এরপর পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) মামলাটি তদন্ত করে নিহতের পরিচয় সনাক্ত করে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি ঘাতক ওই সৎবাবাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পর নিজের হাতে সৎ পুত্রকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে সে।

২৫ জুলাই মঙ্গলবার সকালে পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (.দ্বা.) মো. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়।

নিহত মুরসালিন মধুখালী উপজেলার মেগচামী ইউনিয়নের আশাপুরের দরিদ্র শ্রমিক মো. আশরাফুল শেখ ইতি খাতুন দম্পতির সন্তান।

জানা গেছে, প্রথম স্বামী আশরাফুলের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পরে ইতির সাথে বিয়ে হয় মিজানুর রহমান মিজান (৩৫) নামে আরেক যুবকের। মিজান-ইতি দম্পতির ঘরেও এক সন্তান রয়েছে। পিবিআই জানায়, মিজান তার স্ত্রী ইতিকে মারধর করতো বলে গত বছরের ২৩ জুলাই ইতি মুরসালিনকে তার মায়ের কাছে রেখে ঢাকা চলে যায়। এর দু'দিন পর গত বছরের ২৫ জুলাই মুরসালিন নিখোঁজ হয়। ঘটনায় মধুখালী থানায় মা ইতি খাতুন একটি জিডি করলেও কোন খোঁজ মিলেনি।

এদিকে মুরসালিন নিখোঁজ হওয়ার মাস পরে গত ২৬ ডিসেম্বর মধুখালীর পশ্চিম গোন্দারদিয়া সরদারপাড়ায় চন্দনা-বারাশিয়া নদীর পাড়ে বল খেলার সময় প্রথমে একটি মাথার খুলি বের হয়ে এলে সন্দেহবশত: প্লাস্টিকের বস্তা খুলে মানুষের হাড়গোড় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দিলে প্লাস্টিকের ওই বস্তা থেকে প্রায় ৭০ টি হাড়গোড় উদ্ধার করে। ঘটনায় মধুখালী থানার এসআর সৈয়দ তোফাজ্জেল হোসেন বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্তের পরেও মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় মামলাটির তদন্তভার পিবিআইতে ন্যস্ত হয়। পিবিআই ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ মামলাটি তদন্তের দ্বায়িত্ব দেন এস আই রামপ্রসাদ ঘোষকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ফরিদপুরের উপ পরিদর্শক (এস.আই) রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, হাড়গোড়ের পরিচয় সনাক্তের জন্য শিশু মুরসালিনের নিখোঁজ হওয়ার জিডির সূত্র ধরে তার মা ইতি বাবা আশরাফুল শেখের ডিএনএ টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবরেটরীতে পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে মুরসালিনের পরিচয় মিলে। এরপর হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পিবিআই একটি স্পেশাল টিম গঠন করে।

এসআই রামপ্রসাদ ঘোষ বলেন, মামলা তদন্তের পর্যায়ে মুরসালিনের বাড়ির সামনের একটি চানাচুর ফ্যাক্টরির দারোয়ানের নিকট থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন সৎ বাবা মিজানকে তিনি মুরমালিনকে ডেকে নিতে দেখেছেন। এরপর গত রোববার রাতে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার ওয়াবদা মোড় হতে মিজানকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের নং আমলী আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফরিদউদ্দীন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শিশু মুরসালিনকে হত্যার কথা স্বীকার করে সে।

আসামি মিজান স্বীকারোক্তিতে বলেন, ঘটনার দিন সকালে তিনি মরিচ ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এসময় ঘর হতে মুরসালিনকে বের হতে দেখে তাকে ডেকে নিয়ে তার মা কোথায় গিয়েছে বলে জানতে চায়। তবে প্রশ্নের কোন সদুত্তর না পেয়ে সে মুরসালিনের কানে সজোরে থাপ্পড় মারে। সজোরে মারা ওই থাপ্পড়ে কানের পর্দা ফেটে রক্তাক্ত মুরসালিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মারা যায়। এরপর সড়কের পাশে বড় ঘাসের আবডালে মুরসালিনের লাশ লুকিয়ে রাখে মিজান। রাতে ঘর থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে মুরসালিনের লাশ বস্তাবন্দি করে ঘাড়ে করে সে প্রায় কিলোমিটার দুরে নিয়ে নদীর পাড়ে মাটির নিচে পুঁতে রেখে আসে।

 

 

«
Next
Newer Post
»
Previous
Older Post

No comments:

Leave a Reply